শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন
আব্দুর রব, বড়লেখা: বড়লেখার কলাজুরা এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে দু’টি গোরস্থানে বেড়ে ওঠা গাছের ডালপালা আর ঝোঁপঝাড় ও রাস্তার পাশের বনজঙ্গল পরিস্কার করেছে একদল কিশোর-তরুণ। এতে ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে থাকা পুরাতন কবরগুলো বেরিয়ে এসেছে। এখন স্বজনরা কবরগুলো দেখে জিয়ারত করতে পারবে। কারণ এতদিন কবরগুলো ঝোপঝাড়ের আড়ালে ছিল।
গত তিন দিনে স্বেচ্ছাশ্রমে গোরস্থান দু’টি পরিস্কার করেছে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব-হাতলিয়া (কলাজুরা)’র সদস্যরা। কিশোর গ্যাংকের নানা অপরাধ কর্মকাÐে অভিভাবক মহল ও প্রশাসন যখন উদ্বিগ্ন, তখন এলাকার কিশোর-তরুণদের এধরণের জনকল্যাণ মূলক কাজ প্রশংসিত হচ্ছে ।
এর আগে কিশোর-তরুণরা কলাজুরা বাজার থেকে বাংলা নার্সারি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারের ঝোপঝাড়-জঙ্গল কেটে পরিস্কার করেছে। পাশাপাশি কলাজুরা বাজারে যত্রতত্র ফেলা ময়লা-আবর্জনাও পরিস্কার করেছে। এতে এলাকার দৃশ্য অনেকটা পালটে গেছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকার মসজিদগুলোতে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশপাশি কলাজুরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনা টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কলাজুরা বাজারের পাশে প্রায় ৯০ শতক জায়গা জুড়ে একটি সার্বজনীন গোরস্থান রয়েছে। একই এলাকার হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ৯০ শতক জায়গা জুড়ে আরেকটি সার্বজনীন গোরস্থান রয়েছে। এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দু’টিতে কবর দেওয়া হয়। গোরস্থান দু’টিতে রয়েছে এলাকার শত শত মানুষের কবর। রয়েছে নানা জাতের গাছপালা। দীর্ঘদিন ধরে গোরস্থান দু’টিতে বেড়ে ওঠা গাছের ডালপালা ও ঝোপঝাড় পরিস্কার করা হয়নি। এতে ঝোপঝাড়ের নিচে আড়াল পড়েছে অনেক কবর। জিয়ারত করতে আসা অনেকেই ঝোপঝাড়ের কারণে দেখতে পারতেন না তার আপনজনের কবর। এছাড়া ঝোপঝাড়ের কারণে গোরস্থানের ভেতরে কারও লাশ দাফন করতে গেলে আগে ঝোপঝাড় কাটতে হতো। এতে তাদের অনেকটা সমস্যায় পড়তে হতো। এই সমস্যা দূর করতে কলাজুরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’র সদস্যরা গোরস্থান দু’টি স্বেচ্ছায় পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়। শনিবার থেকে সংগঠনের প্রায় ৫০ সদস্য গোরস্থান দু’টির ঝোপঝাড় পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করে। রোববার তারা কলাজুরা বাজারের পাশের সার্বজনীন গোরস্থান পরিস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছে। সোমবার সকালে একই এলাকার হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের আরেকটি সার্বজনীন গোরস্থানের ঝোঁপঝাড় ও জঙ্গল তারা পরিস্কার করেছে।
সংগঠনের সভাপতি রিফাত বিন মুহিত ও সাধারণ স¤পাদক মুরাদ আজীর বলেন, কয়েক যুগ থেকে এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দু’টিতে লাশ দাফন করা হয়। একটি গোরস্থান কলাজুরা বাজারের পাশে। অপরটি স্থানীয় হাইস্কুলের পাশে। কিন্তু গাছের ডালপালা আর ঝোঁপঝাড়ের কারণে গোরস্থানের পুরাতন কবরগুলো দেখা যাচ্ছিল না। এছাড়া এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দুঁটিতে বনজঙ্গলের কারণে কবর দেওয়ার উপযুক্ত জায়গাও পাওয়া যেত না। কেউ সেগুলো পরিস্কার করেনি। তাই আমরা গোরস্থান দু’টি পরিস্কারের উদ্যোগ নিয়ে মাত্র ৩ দিনে পরিস্কার করেছি।
এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সার্বজনীন গোরস্থানটিতে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি এলাকার অনেক মানুষের কবর রয়েছে। এটি অনেক পুরাতন গোরস্থান। দীর্ঘদিন ধরে গোরস্থানটির ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করা হয়নি। এতে অনেক পুরাতন কবরগুলো ঝোপের আড়ালে অযতেœ অবহেলায় পড়েছিল। এছাড়া এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থানটির যে জায়গায় দাফন করা হয়, সেই জায়গাটুকু পরিস্কার করা হয়। গোরস্থানের ভেতরে কাউকে দাফন করতে আগে ঝোঁপঝাড় পরিস্কার করতে হয়। যা মারাত্মক ঝামেলা। তবে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব-হাতলিয়া (কলাজুরা)’র সদস্যরা দু’টি গোরস্থান পরিস্কার করেছে। এতে ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে থাকা অনেক পুরাতন কবর বের হয়েছে। এখন এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থানের ভেতরে দাফন করা সহজ হবে।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ সদস্য আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব-হাতলিয়া (কলাজুরা)’র সদস্যরা কখনও এলাকার রাস্তা, কখনও বাজারে ফেলা ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছে। গত কদিনে এলাকার দু’টি সার্বজনীন গোরস্থান পরিস্কার করেছে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় কিশোর-তরুণরা যখন মুঠোফোনে সময় কাটাচ্ছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ঠিক সেসময় সংগঠনের কিশোর-তরুণরা এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।